পশ্চিমবঙ্গে বিশেষ নিবিড় সংশোধন ২০২৫
পশ্চিমবঙ্গে বিশেষ নিবিড় সংশোধন ২০২৫: বেশ কয়েকদিন ধরে বিহারের ভোটার তালিকা নিয়ে প্রবল আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। অভিযোগ উঠেছে যে ভোটের আগে ভোটার তালিকা থেকে হঠাৎ করে লক্ষ লক্ষ নাম মুছে যাচ্ছে। অনেকেই জানতে পারছেন, তাদের আর ভোটারই নেই! অথচ বছরের পর বছর ধরে তাঁরা ভোট দিয়ে এসেছেন। এই ঘটনার রেশ এখন পশ্চিমবঙ্গেও টের পাওয়া যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের এক সূত্র থেকে জানা যায়, বাংলাতেও এই বিশেষ প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে আগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকে। এই প্রক্রিয়া শুরু হওয়া আগেই বিস্তারিত তথ্য জেনে নিন, আজকের প্রতিবেদন থেকে, তাই প্রতিবেদনটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ভালো করে পড়ুন।
এই ঝামেলা কেন শুরু হল?
২০২৪ সালের জুন মাসে বিহারে নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করে, ভোটার তালিকায় শুধুমাত্র ‘যোগ্য’ নাগরিকদের নাম রাখা হবে। তার জন্য নথি চাওয়া হচ্ছে। কিন্তু সমস্যাটা ঠিক এখান থেকেই শুরু হয়েছে। যে ১১টি নথি নির্বাচন কমিশন চেয়েছে, তার মধ্যে সাধারণ মানুষের কাছে যেগুলো সহজে থাকে— যেমন আধার কার্ড, রেশন কার্ড, বা প্যান কার্ড— সেগুলোর একটাকেও মানা হচ্ছে না। বরং চাওয়া হয়েছে এমন কিছু নথিপত্র যে নথিপত্রগুলো বহু মানুষের কাছেই নেই।
বড় প্রশ্ন! কারা বাদ পড়বে, কারা থাকবে?
কমিশনের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে, এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মৃত ভোটার, অন্যত্র চলে যাওয়া লোকজন বা অবৈধ নাম সরানো যাবে।
অন্যদিকে, বিরোধীদের মতে, এটা করে আসলে গরিব, সংখ্যালঘু, দলিত, ও প্রান্তিক শ্রেণির মানুষদের বাদ দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে। কারণ এসব শ্রেণির মানুষের অনেকের কাছেই সরকারি নথিপত্র থাকে না।
একজন বৃদ্ধা বলছিলেন, “আমি গত চল্লিশ বছর ধরে ভোট দিচ্ছি। এখন শুনছি, নতুন করে নাগরিকত্ব প্রমাণ দিতে হবে! এটা কি সহজ কথা?”
সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সংগঠন এই নিয়মের বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছে। ১০ জুলাই আদালত পরামর্শ দেয়, আধার বা রেশন কার্ডকেও প্রমাণপত্র হিসাবে ধরা হোক। কিন্তু কমিশন তাতে রাজি হয়নি। তারা বলছেন, এগুলো নাগরিকত্বের প্রমাণ যথার্থ নয়। এই মামলার পরবর্তী শুনানি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তখনই জানা যাবে, আদালত কী সিদ্ধান্ত নেয়?
পশ্চিমবঙ্গে কী হবে?
২০০২ সালে পশ্চিমবঙ্গে এই প্রক্রিয়া শেষবার হয়েছিল। এই নিয়ে কমিশনের বক্তব্য, সেই তালিকাটাকেই ধরে এগোবে। তবে বাংলার প্রশাসনিক সূত্র জানাচ্ছে, সব প্রস্তুতি তৈরি, কেবল ঘোষণার অপেক্ষা। আদালত যদি বিহারের প্রক্রিয়ায় স্থগিতাদেশ না দেয়, তবে এখানেও তালিকা সংশোধন শুরু হয়ে যাবে।
পশ্চিমবঙ্গে বিশেষ নিবিড় সংশোধন ২০২৫
কমিশনের কি বলেছেন?
কমিশনের তরফ থেকে ১১টি নথি কথা বলা হয়েছে। সেগুলো আপনার কাছে আছে তো? বিস্তারিত দেখেনিন-
•সরকারি চাকরিজীবী বা পেনশনপ্রাপক পরিচয়পত্র। যেমন – কেন্দ্রীয়/রাজ্য সরকার বা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার কর্মী হলে দেওয়া ID, অথবা পেনশন পেমেন্ট অর্ডার।
•সরকারি প্রতিষ্ঠান দ্বারা জারি করা পরিচয়পত্র। যেমন- ব্যাঙ্ক, ডাকঘর, এলআইসি, বা অন্য রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা কর্তৃক ১ জুলাই ১৯৮৭-এর পরে জারি নথি।
•জন্মের শংসাপত্র– স্বীকৃত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ইস্যু করা জন্ম নিবন্ধনের কাগজ।
•পাসপোর্ট– বৈধ ভারতীয় পাসপোর্ট।
•শিক্ষাগত যোগ্যতার শংসাপত্র– স্বীকৃত বোর্ড/বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রদত্ত ম্যাট্রিকুলেশন বা অন্যান্য শিক্ষাগত শংসাপত্র।
•স্থায়ী বাসিন্দার প্রমাণপত্র– রাজ্য সরকারের কর্তৃপক্ষ দ্বারা জারি করা স্থায়ী বসবাসের শংসাপত্র।
•বন অধিকারের শংসাপত্র– বনভূমি বা অরণ্য অধিকারের সরকারি স্বীকৃত নথি।
•জাতিগত শংসাপত্র– তপশিলি জাতি/উপজাতি, ওবিসি বা অনগ্রসর শ্রেণির শংসাপত্র।
•জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (NRC)-এর অন্তর্ভুক্তি সংক্রান্ত নথি– যদি প্রযোজ্য হয়, নাগরিকত্ব রেজিস্টারে নাম থাকলে তার প্রমাণ।
•পারিবারিক রেজিস্টার– স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বা গ্রাম পঞ্চায়েত দ্বারা প্রস্তুত পারিবারিক রেজিস্টার কপি।
•জমি বা বাড়ির সরকারি বরাদ্দ সংক্রান্ত নথি– সরকারি প্রকল্প বা দপ্তর থেকে জমি বা ঘরের বরাদ্দের শংসাপত্র।
কিছু সাধারণ মানুষের গল্প:-
আমাদের এই বাংলায় গ্রামে বা মফস্বলে অনেকেই এখনও আধার-রেশন ছাড়া আর কোনও সরকারি নথি পাননি। কারো জন্মের শংসাপত্র নেই, কারো পাসপোর্ট নেই, কেউ আবার কোনও সরকারি চাকরি বা পেনশন পান না। এসব মানুষ ভোট দেন বহু বছর ধরে, কিন্তু এখন তাঁদের ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ার ভয়! এটা শুধু একটা কাগজপত্রের বিষয় নয়, এটা একধরনের অস্তিত্বের প্রশ্ন।
সাধারণ মানুষেরা কী বলছেন?
উত্তর দিনাজপুরের গোপলবাবু বললেন, “আমার ছেলের জন্মের শংসাপত্র নেই। ও তো ২০০৪ সালে জন্মেছে, এখনও ভোটার হয়নি। এখন শুনছি, আমারই নাম নাকি বাদ যাবে!”
দক্ষিণ দিনাজপুরের মিতালী মুখার্জী বলেন, “প্যান কার্ড আছে, আধার আছে, রেশন কার্ড আছে— এতেই তো সরকার সব সুবিধা দেয়। এখন হঠাৎ কেন চলবে না?”

উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বলা যায়, এই সমস্যাটি শুধু ভোটার তালিকার সমস্যা নয়, এটা একটি নাগরিক পরিচয়ের প্রশ্ন। যাদের কণ্ঠ এতদিন নির্বাচন ঘিরে শোনা যেত, তাঁরা যদি আজ বাদ পড়ে যান, তবে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ কোথায় দাঁড়াবে? বিহারের মতো যদি বাংলাতেও এই প্রক্রিয়া শুরু হয়, তবে বহু পরিবার নতুন করে দুশ্চিন্তায় পড়বে। এখন সবার দৃষ্টি সুপ্রিম কোর্টের দিকে। সেই রায়ই ঠিক করবে বাংলায় আসন্ন ভোট কেমন হবে? এই নিয়ে সাধারণ মানুষের অনেক প্রশ্ন।
আরও পড়ুন:- ‘স্নেহের পরশ’ প্রকল্প: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নতুন প্রকল্প চালু করলেন! মিলবে মাসে মাসে টাকা? জানুন।

বিগত প্রায় ২ বছর ধরে ডিজিটাল মিডিয়ায় কাজের সঙ্গে যুক্ত। রাজ্য ও কেন্দ্রের সরকারি ও বেসরকারি চাকরির প্রতিবেদন লিখতে পারদর্শী।