ওয়াকফ সংশোধনী বিল ২০২৫
ওয়াকফ সংশোধনী বিল ২০২৫: ওয়াকফ বোর্ড জন্য দুঃখের খবর। রাষ্ট্রপতির সইয়ে শুরু হয়েছে ওয়াকফ আইন, এবার কী শক্তি হারাবে ওয়াকফ বোর্ড? ২০২৫ সালে নতুন রূপে আইন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করল ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল।
সম্প্রতি রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সম্মতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে এটি আইনে পরিণত হয়। সংসদের দুই কক্ষেই দীর্ঘ আলোচনার পর এই বিলটি পাশ করা হয়েছিল। সম্প্রতি এই বিল লোকসভায় পেশ হয়, আর রাজ্যসভায় আলোচনা চলে প্রায় ১২ ঘণ্টা। এরপর ৫ এপ্রিল, রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের মাধ্যমে তা আইনি মর্যাদা পায়। লোকসভায় পাশ হলেও ওয়াকফ সংশোধনী বিল নিয়ে তোলপাড় সংসদ থেকে শুরু করে গোটা দেশ। বিতর্কে অংশ নিয়ে তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, ওয়াকফ সংশোধনী বিল দেশের মুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ। এই আইন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানাবো আজকে এই প্রতিবেদনে, তাই প্রতিবেদনটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ভালো করে পড়ুন। ওয়াকফ সংশোধনী বিল ২০২৫
ওয়াকফ কি?
“ওয়াকফ” শব্দটি আরবি থেকে এসেছে। যার অর্থ “স্থগিত রাখা” বা “কোনো কিছুকে বন্ধ করে দেওয়া বা স্থায়ীভাবে উৎসর্গ করা”। ওয়াকফ হলো ইসলামি আইনে একটি স্থায়ী দাতব্য বা ধর্মীয় উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত সম্পত্তি। এই সম্পত্তি সাধারণত স্থাবর বা অস্থাবর হতে পারে, যা কোনো মুসলমান তার ব্যক্তিগত সম্পদ থেকে ধর্মীয় কাজে ব্যবহারের জন্য দান করে। ওয়াকফ করা সম্পত্তি অন্য কাউকে বিক্রি বা হস্তান্তরিত করা যায় না। ওয়াকফের উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কোনো ব্যক্তি তার সম্পত্তি মসজিদ, মাদ্রাসা, হাসপাতাল, বা দরিদ্রদের জন্য দান করতে পারে। ওয়াকফ সংশোধনী বিল ২০২৫.
ওয়াকফ কয় প্রকার ও কি কি?
ওয়াকফ সাধারণত তিনটি ধরনের হয়ে থাকে। যথা-
•ওয়াকফ ফি লিল্লাহ: ওয়াকফ ফি লিল্লাহ হলো কেবল ধর্মীয় বা দাতব্য উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত সম্পত্তি।
•ওয়াকফ আলাল আওলাদ: ওয়াকফ আলাল আওলাদ হলো নিজের পরিবার বা বংশধরদের জন্য উৎসর্গীকৃত সম্পত্তি।
•মিশ্র ওয়াকফ: মিশ্র ওয়াকফ হলো ধর্মীয় ও দাতব্য উভয় উদ্দেশ্যেই উৎসর্গীকৃত সম্পত্তি।
ওয়াকফের উদ্দেশ্য:-
ওয়াকফের মূল উদ্দেশ্য হলো ধর্মীয় ও সামাজিক কাজে সম্পদ ব্যবহার করা, যেমন – মসজিদ নির্মাণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন, দরিদ্রদের সাহায্য করা, হাসপাতাল তৈরি করা ইত্যাদি।
ওয়াকফের গুরুত্ব:-
ওয়াকফের গুরুত্ব হলো এটি একটি স্থায়ী দাতব্য ব্যবস্থা, যা সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। ওয়াকফ ব্যবহার করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এবং সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজে সহায়তা করা যায়।
ওয়াকফের বৈশিষ্ট্য:-
ওয়াকফের মূল্য বৈশিষ্ট্য হলো –
•ওয়াকফ করা সম্পত্তি অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যায় না।
•ওয়াকফ করা সম্পত্তি বিক্রি বা হস্তান্তরিত করা যায় না।
•ওয়াকফের ব্যবস্থাপনার জন্য ওয়াকফ বোর্ড নামে একটি সংস্থা থাকে।
•ভারতে ওয়াকফ সম্পর্কিত আইন রয়েছে, যা ওয়াকফ সম্পত্তির সুরক্ষা ও ব্যবস্থাপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ওয়াকফ ব্যবস্থাপনা পরিচালনা:-
ওয়াকফের সম্পদ পরিচালনার জন্য একটি ট্রাস্টি বা মুতাওয়াল্লী নিযুক্ত করা হয়, যিনি এই সম্পদকে ওয়াকফের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে থাকেন। এই গুলোর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব থাকে ওয়াকফ বোর্ডের উপর। ওয়াকফ সংশোধনী বিল ২০২৫.
Ration card: রেশন কার্ড নিয়ে নতুন নির্দেশিকা সরকারের, বিস্তারিত জানুন।
ওয়াকফ সংশোধনী বিল ২০২৫
ওয়াকফ বিল বলতে কি বুঝায়?
এই বিলটি ওয়াকফ আইন, 1995-কে সংশোধন করে, যা ভারতে ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনাকে নিয়ন্ত্রণ করে। বিলটিতে বলা হয়েছে যে , কেবলমাত্র কমপক্ষে পাঁচ বছর ধরে ইসলাম ধর্ম পালনকারী ব্যক্তিই ওয়াকফ ঘোষণা করতে পারবেন । এটি স্পষ্ট করে যে, ঘোষিত সম্পত্তির মালিকানা ব্যক্তিরই থাকতে হবে। এটি ব্যবহারকারীর দ্বারা ওয়াকফ বাদ দেয়। এটি আরও যোগ করে যে, ওয়াকফ-আলাল-আওলাদের ফলে দাতার উত্তরাধিকারী, যার মধ্যে মহিলা উত্তরাধিকারীও অন্তর্ভুক্ত, উত্তরাধিকার অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়া উচিত নয়।
এই বিলের মূল উদ্দেশ্য:-
• প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি করা।
•ওয়াকফ সম্পত্তির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা।
•ইসলামিক ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সুরক্ষায় সহায়তা করা।
•ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতি রোধ করা।
ওয়াকফের আইন কী?
ভারতে ওয়াকফ সম্পত্তি পরিচালনার জন্য একটি বিশেষ আইন রয়েছে, যা বিস্তারিত ভাবে BBC এবং Wikipedia এ উল্লেখ করা রয়েছে। ওয়াকফ সংশোধনী বিল ২০২৫.
এই আইন সংশোধন প্রস্তাব রাখা কবে হয়েছে?
ওয়াকফ সংশোধনী বিল ২০২৫ ভারতীয় লোক সভায় ২০২৪ সালে ৮ই আগস্ট পেশ করা হয়। এই বিলে ১৯২৩ সালের মুসলমান ওয়াকফ আইন বাতিল এবং ১৯৯৫ সালের ওয়াকফ আইন সংশোধন করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
আইনটির মূল উদ্দেশ্য ও কেন্দ্রের অবস্থান:-
কেন্দ্র সরকারের দাবি, এই নতুন আইন মুসলিম সমাজের সার্বিক উন্নয়নের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। সরকারের অভিমত বিশেষ করে মুসলিম নারীদের ক্ষমতায়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, দক্ষতা বৃদ্ধি, ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের সুযোগ তৈরির মাধ্যমে সমাজে তাঁদের ভূমিকা আরও শক্তিশালী হবে। সরকারের যুক্তি, দেশের প্রায় ৮.৭২ লক্ষ ওয়াকফ সম্পত্তি যদি সঠিকভাবে পরিচালিত হয়, তবে মুসলিম সমাজের পাশাপাশি গোটা দেশ উপকৃত হবে। দুর্নীতি ও অস্বচ্ছতা দূর করে, এই সম্পত্তিগুলিকে জনহিতৈষী কাজে ব্যবহারের উপযোগী করাই আইনটির মূল উদ্দেশ্য।
বিরোধীদের প্রতিক্রিয়া:-
এই আইনটিকে ঘিরে বিরোধীরা তীব্র আপত্তি তুলেছেন। কংগ্রেস, তৃণমূলসহ একাধিক বিরোধী দল মনে করছে, নতুন আইনের মাধ্যমে ওয়াকফ বোর্ডের ক্ষমতা খর্ব করা হচ্ছে, যার ফলে মুসলিম সম্প্রদায়ের অধিকার হ্রাস পাবে।কলকাতায় পার্ক সার্কাসে জয়েন্ট ফোরাম অফ ওয়াকফ প্রোটেকশনের নেতৃত্বে বিলটির প্রতিবাদে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে পুলিশের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কির ঘটনাও ঘটে।
নতুন আইনে কী কী পরিবর্তন আসছে?
বর্তমানে ওয়াকফ বোর্ডের যে অধিকার ছিল, তার একটি বড় অংশই সরে যাচ্ছে জেলা প্রশাসনের হাতে। আগে ওয়াকফ বোর্ডই সিদ্ধান্ত নিত কোন সম্পত্তি ওয়াকফ হবে কি না, কিন্তু সংশোধনের ফলে এখন সেই সিদ্ধান্ত নেবে সংশ্লিষ্ট জেলার প্রশাসনিক আধিকারিক। এছাড়াও যদি কোন বিতর্কিত সম্পত্তিকে সরকারি সম্পত্তি হিসেবে ধরা হবে যতক্ষণ না সরকার থেকে ভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বিতর্কের নতুন আবহে শুরু:-
ওয়াকফ (সংশোধনী) আইন ২০২৫ পাশ হওয়ার মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন সরকারের উন্নয়নের বার্তা স্পষ্ট, তেমনই অন্যদিকে রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে এর বিরুদ্ধস্বরে উত্তাল পরিস্থিতিও তৈরি হয়েছে। এখন একটি দেখার বিষয়, এই নতুন আইনের বাস্তব প্রয়োগ মুসলিম সমাজের জন্য কীভাবে ফলপ্রসূ হয়।
ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল ২০২৫ পিডিএফ: ডাউনলোড করুন ।

বিগত প্রায় ২ বছর ধরে ডিজিটাল মিডিয়ায় কাজের সঙ্গে যুক্ত। রাজ্য ও কেন্দ্রের সরকারি ও বেসরকারি চাকরির প্রতিবেদন লিখতে পারদর্শী।