Songs of Forgotten Trees: পুরুলিয়ার মেয়ের ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসব জয়!
Songs of Forgotten Trees
পুরুলিয়া জেলার নিতুড়িয়া ব্লকের নারায়ণপুর গ্রামের মেয়ে অনুপর্ণা রায় ভেনিস আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে তাঁর ছবি Songs of Forgotten Trees এর জন্য অরিজ্জোন্তি বিভাগে শ্রেষ্ঠ পরিচালকের সম্মান পেয়েছেন।
এই তরুণীর নারায়নপুর গ্রামের এক মধ্যবিত্ত পরিবারের পরিমিত জীবনের সঙ্গে বেড়ে ওঠা। বাবা-মায়ের স্বপ্ন ছিল মেয়েটি পড়াশোনা করে স্থায়ী একটি চাকরি করুক। অনুপর্ণাও প্রথমে সেই পথেই হাঁটেন। ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক সম্পন্ন করেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এবং কিছুদিন কর্পোরেট দুনিয়ায় কাজও করেন। কিন্তু মনের ভেতরের শিল্পী তাকে অন্য পথের সন্ধান দিচ্ছিল। তাই তিনি সাহস করে অভিনয়ের প্রশিক্ষণ নেন অনুপম খেরের ইনস্টিটিউটে। ধীরে ধীরে অভিনয়ের জগত থেকেই সিনেমা বানানোর স্বপ্ন তাঁর মধ্যে জন্ম নিতে থাকে।

এই স্বপ্নের ফলশ্রুতি তাঁর প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা Songs of Forgotten Trees। ছবিটি দুই অভিবাসী নারীর গল্পে বোনা, যেখানে মুম্বই শহরের ব্যস্ততার ভেতর নিঃসঙ্গতা, টিকে থাকা আর মানবিক সংযোগের মুহূর্ত ফুটে ওঠে। সিনেমাটিতে অনুপর্ণা তাঁর নিজের অভিজ্ঞতা, চারপাশের সমাজের গল্প আর গ্রামীণ বাংলার বাস্তবতাকে মিশিয়েছেন। সরল অথচ কাব্যিক ভঙ্গিতে বলা এই গল্প দর্শক ও সমালোচক উভয়ের মন জয় করে নেয়।

২০২৫ সালে ভেনিস আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটি নির্বাচিত হয় অরিজ্জোন্তি বিভাগে এবং অনুপর্ণা জয় করেন শ্রেষ্ঠ পরিচালকের সম্মান। এই পুরস্কার পাওয়ার মাধ্যমে তিনি প্রথম ভারতীয় হিসেবে এই মর্যাদায় ভূষিত হলেন। সাদা শাড়ি পরে মঞ্চে দাঁড়িয়ে যখন তিনি বললেন—“এই সম্মান আমি উৎসর্গ করছি প্রতিটি নারীর প্রতি, যাদের কণ্ঠস্বর দীর্ঘদিন ধরে চাপা পড়ে গেছে”—তখন সেই মুহূর্ত ইতিহাস হয়ে রইল।

যে বাবা একসময় মেয়ের সিনেমার স্বপ্ন নিয়ে দ্বিধায় ছিলেন, সেই বাবা আজ মেয়েকে দেখে গর্বে ভরে ওঠেন। পুরুলিয়ার এক ছোট গ্রাম থেকে উঠে এসে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রমঞ্চে অনুপর্ণার এই সাফল্য শুধু তাঁর ব্যক্তিগত জয়ের গল্প নয়, বরং এক অনুপ্রেরণা। তাঁর জীবনের পথচলা প্রমাণ করে যে সাহস, অধ্যবসায় আর নিজের মধ্যে তাগিদ থাকলে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে উঠে এসে বিশ্বকে আলোড়িত করা সম্ভব।

বিগত প্রায় ৫ বছর ধরে ডিজিটাল মিডিয়ায় কাজের সঙ্গে যুক্ত।